ঋ-জাত ধ্বনিমালা


ঋ-জাত ধ্বনিমালা

বিভাবসু










ঋ ১

বিভাবসু 


তোকে ভালবেসেছি বলে 

ভালবাসাকে অলীক ভাবতে শিখেছি 

তুই ফেলে যাওয়ার পরে 

নিজের কাছে মূল্যবান হয়ে উঠেছি আমি 


ফাল্গুন জুড়ে তোর ছায়ারা 

ফুটে উঠেছে গাছে গাছে

তোকে ভালবেসেছি বলে 

ভালবাসতে পেরেছি জীবন


তোর ফেলে যাওয়া পালকগুলো দিয়ে 

শিরোস্ত্রান বানিয়েছি


একটা ছুটন্ত অগ্নিকেতুকে 

বুকের মধ্যে পুষছি এখন


০৩.০২.২৪


১.১

তাহলে ভ্রমণ ছিল ভাল 

শরীরে শরীর জুড়ে জেগেছিল জল 

স্রোতস্বিনী  তুই, গভীরতা দশ বাও 

জীবনের স্বাদ এর চেয়ে বেশি নয়


২০.০৬.২৪


ঋ ২


দৃষ্টিশক্তি আরও ঝাপসা হয়েছে 

সময় হয়ে  উঠেছে একঘেয়ে 

আর কোন পথও নেই চলার 

তবু তোর স্মৃতি কী অমলিন! 

তবু তোর প্রেমে এখনও দিওয়ানা আমি 


কোথায় যে গেলি তুই! 

কোন অচিনদেশে! 

কোন ব্যথার সহমর্মী হয়ে! 


রেখেছিলাম আলোর মত 

ফুরফুরে আর প্রাণবন্ত করে  

এখন তোর শরীর জুড়ে 

স্বপ্নহীনতার বিজ্ঞাপন 


স্মৃতির কোলাহলে বাঁচা 

যন্ত্রণাদায়ক 


০৮.০২.২৪


২.১

দেখি তোকে এত, তবু স্বাদ কিছু 

কমে না কেন? হায়!

এত প্রেম বুকে, তবু অপ্রেমে 

জীবন বয়ে চলে, কোথায় যে যায়! 


২০.০৬.২৪


ঋ ৩


আমার বাজিমাৎ ছিলি তুই 

নোতুনতর স্বপ্ন দিয়ে সেই যে সাজিয়ে ছিলাম! 

তারপর পথ অন্তহীন

প্রেম অন্তহীন

পথচাওয়াও অন্তহীন


আজ চারদিক শুনশান 

ঝিঁঝির অবিরাম ডাকে খানিকটা বেদনার্ত 

রাতপাখিদের স্বপ্নগুলো 

দলছুট হয়ে 

এদিক ওদিক ছুটছে


আমার বাজিমাৎ ছিলি তুই 

অপূর্ব এক খেলার সাথী 

অনন্য এক দিবাস্বপ্ন 

তরুণ কোনও নির্মাণ-উচ্ছ্বাসে ডগমগ


আরও যেন প্রান্তিক হয়ে গেছি আমি 

হেরে যাওয়া বাজিকর এক 

এখন


০৮.০৬.২৪ 


৩.১

চৌষট্টি খোপ, চৌষট্টিকলা 

তোকেই শুধু প্রেমিকা গুণি 

তোকে নিয়ে নিরন্তর জাগি 

তোকে নিয়ে অবিরত নরকগুলজার 


২০.০৬.২৪


ঋ ৪


ভালবাসা কখনও কখনও ঘৃণা হয়ে ওঠে 

ভালবাসা কখনও কখনও প্রতিহিংসাপরায়ণ


তেমন হয়েছে কতদিন তোর প্রতি 

মনে হয়েছে ছুটে গিয়ে তছনছ করি 

দুমড়ে-মুচড়ে দেই

ছিঁড়ে-খুঁড়ে ফেলি


এখন সময় সমাহিত 

মন শান্ত 

এখন একা-একা বিলাবল গাই 

এখন তৃতীয়পক্ষের নির্বাণের দিকে ফিরি


ঘৃনা কখন যে জল হয়ে যায়! 

প্রেম কখন যে হয়ে ওঠে নদী! 


জীবন কখন যে ভাটির দেশে চলে আসে!


জীবন এখন বৈঠাহীন এক নৌকো  


০৮.০৬.২৪


৪.১

আশ্লেষে তুই  জড়িয়ে নিয়ে 

আমাকে এবং আমার অতীত 

গল্পে, বাঁচিস 

বাঁচাস আমার বাকীটা জীবন 


২০.০৬.২৪


ঋ ৫


তোকে পাখির চোখ করে এগোচ্ছি 

একটা গভীর শূন্যতাকে ছোঁব বলে 

একটা প্রাণবন্ত জীবন হয়ে উঠতে গিয়ে 

আমার সমস্ত নিশানা জুড়ে তুই


এ এক অভূতপূর্ব অনুভূতি 

এ এক নির্নিমেষ তৃপ্তিধারা

এই শূন্যতাকে যে ছুঁতে পারেনি 

সে কিছুতেই আলোর ঠিকানা পাবে না 


তোকে ধ্যানে পাই 

তোকে পাই বিধানে 

তোকে পাই কল্পনায় 

তোকে পাই পদ্মপাতার শিশিরে

অনন্ত ছুটে চলার মধ্যে তোরই গতিজাড্য 


ঋ মানে এক ছুটে উধাও হয়ে যাওয়া 

ঋ মানে পাখির চোখে বিঁধে যাওয়া আমি  


১১.০৬.২৪


৫.১

পাখিটি ছোট্ট, যেন তুই 

বুকের মধ্যে ওঠে তোলপাড়  

তীরন্দাজ আমি বা অন্য কেউ  

তুই হলি সে; কালের উল্লাসধ্বনি 


২০.০৬.২৪


ঋ ৬


অভিজ্ঞান ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে 

এভাবেই নকশা এঁকেছিলি তুই 

আমাকে ঘিরে তোরই কথকতা 

দেখ, আষ্টে-পৃষ্ঠে তোরই চিহ্নরাজি


তাই নিয়ে আছি বেশ 

তুই ছুটে বেড়াচ্ছিস দিক থেকে দিকান্তরে 

আর তোকে ভেবে ভেবে

নাভিশ্বাস উঠছে আমার


পবিত্র ঋক হয়ে উঠছে তোর ছোঁয়াগুলি 

শ্রাবণিক উপঢৌকনে আকাশ জুড়ে রঙের খেলা 

ভুঁইচাঁপার বনে এখন বিস্তারের পালা

এরপর? 


সব যাত্রাই থামে 

সাব বার্তা কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছুতে পারে না


১২.০৬.২৪


৬.১

চিহ্ন দিয়ে সাজি,সাজাই  

তোর চোখে, মনে অতিচিহ্নিত পথ 

তোর ঠোঁটে কবিতার গন্ধ 

যে বোঝে সে তুখোর প্রেমিক 


২০.০৬.২৪


ঋ ৭


নিন্দিত মেঘেরা ঘন হয়ে আসে 

ভেজা বাতাসের ডানায় মোহগন্ধ 

আর শ্রাবণকথার তুই 

আর তোর দারুণ সাহচর্যের স্বাদ 


তোর সাথে জড়িয়ে থাকত 

কত কত রূপকথার ছেলেমানুষি 

কত অন্তরের গল্প 

অথবা প্রয়োজনহীন আলো-আঁধার  


এসব মায়াজালে 

থাকতো রাক্ষসেরা 

থাকতো শুক-সারি 

থাকতো লুকোচুরি খেলা 


ভ্রমণবিলাসী তুই 

হৃদয়বিলাসীও 

আজ শ্রাবণমেঘেরা মশগুল 

সেইসব পুরাণকথায় 


বিরহে প্রকৃত প্রেমের জন্ম হয় 

একথা বুঝতে পারলে তুমি রাজাধিরাজ 


১৩.০৬.২৪


৭.১

দেখি, খুউব দেখি তোকে

তবু চোখ উপচে পড়ে না 

ভাবি, খুউব ভাবি তোকে

তবু ভালবাসা ফুরোয় না 


২০.০৬.২৪


ঋ ৮


সেই হাঁসেদের কথা মনে আছে তোর?

বাওড়পাড়ের?

যারা একবার আমাদের রাজকীয় সংবর্ধনা দিয়েছিল? 

আর খেয়াঘাটে মেঘেদের নিত্যলীলা?

সব ভুলেছিস? 


আমার সময় জুড়ে আজও

স্মৃতির দাপট


সবকথা ভুলে যাওয়া যায় না 

তোর কথাতো নয়ই 

আমার প্রতিটি রন্ধ্রে 

তোর আদরের নয়ানজুলি

আষাঢ়েনদী হয়ে উঠেছে 

উপচে পড়ছে


তুই আজো কিচিরমিচির হয়ে 

আমার পাশে পাশে ঘুরিস 

মনকথায় মাতিস 

বউকথায় মাতিস

আর একটা নীল সাইকেলকে 

অনেক অনেক পথ ঘুরে আসতে শেখাস 


আজ আমি রিক্ত

ঋতও 

আর আশ্চর্য কোন রিক্থহীন


১৪.০৬.২৪


৮.১ 

তুই, প্রাণের বান্ধব 

উজার করে ভালবাসি বলে 

কখন যে উবে যাস! 

আসলে তুই এক অতিকথা


২০.০৬.২৪


ঋ ৯


ঋজু আর একরোখা একটা স্বপ্ন 

অতল আর অনন্ত একটা প্রেম 

মায়াবী আর প্রাণবন্ত এক নারী 

আর একটা নিভে যাওয়া নদীর করতল 


জীবন এরপরেও বাঁচে 

যাকে বলা যায় লীলা; জীবনলীলা


লীলাবতী, তোর করকলে ঠোঁট রাখি

তোকে ভেলা করে ভেসে যেতে ইচ্ছে করে 

তোকে বিছিয়ে দিতে ইচ্ছে করে ঋতুচক্রে


স্নেহ নিম্নগঙ্গার দিকে ভেসে যায় 

উপসাগরের মোহনায় অনন্ত ঢেউখেলা চলে 

ঢেউয়ের ভেতরে ব্যজস্তুতিময় সন্ধ্যা 

কামনায় ঢেকে যায় অকাম সময়


মেয়েটি ঋজু ছিল 

কিন্তু 

নদীটি তার স্বপ্ন হারিয়ে ফেলেছিল 


১৫.০৬.২৪


৯.১

স্নেহ জলে স্নিগ্ধ হয়ে 

কেমন ফুলে উঠিস পাখিদের মত 

প্রেমে বিস্ফারিত হয়ে 

ফেটে পরিস অক্লান্ত সুখে


২০.০৬.২৪


ঋ ১০


আরও কিছু মেঘলা হতে পারতিস 

আরও কিছু আনন্দলহরি 

আরও কিছু স্বপ্নময় 

আরো কিছু সোহাগি 


এত দ্রুত ফিরে যাবার কী ছিল? 

এত কী তাড়া ছিলো তোর?


তোর প্রতি আমার ভালবাসায় খামতি ছিল কিছু?

নাকি বাতাসের প্ররোচনায় মিশেছিল বারুদ? 

ঘৃণার আকাশে ছিল তীব্র কোন কুজ্ঝটিকা?


তুই আরেকটু ভালোবাসতে পারতিস আষাঢ়কে

তুই আমার বাগানে থাকতে পারতিস থলপদ্মের ঝাড় হয়ে


পৃথিবীতে এখন বৃষ্টির জন্য কাতরতা 

পৃথিবীতে এখন প্রেমের জন্য হাহাকার 

আমি তবু স্নিগ্ধ আছি, বেশ আছি

প্রেমিক সেজে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছি পথে-অপথে...


১৬.০৬.২৪


১০.১

তুই আছিস বলে 

আমি এখনও প্রেমিক 

তোর প্রেম আমাকে 

বৃক্ষ করে তুলেছে


২০.০৬.২৪


ঋ ১১


শত্রুর মুখে ছাই ছিটিয়ে 

আমাদের ভালবাসা পথ হাঁটে 

নরম হয়ে মিশে থাকে পাতার আড়ালে 

যেন বাঁশপাতি পাখিদের শরীরে 

দুরন্ত বাতাসের প্রবাহ 


শত্রুর মুখে আলো ছিটিয়ে 

আমাদের প্রেম তবু অমরত্বের দিকে যেতে চায় 

যদিও আমরা 

আপাতত সুবর্ণমতি নদীকেই বুকে নিয়ে ঘুরছি  


মৃত্যুর মুখে চুনকালি  মাখিয়ে 

বিদ্রুপের দিকে সোঁদালপাপড়ি ছিটিয়ে 

কবিতার  মত অনাড়ম্বর  স্রোতে 

আমাদের এই দিব্যতাযাত্রা 


তুই আমার স্বাদুঋক 

আমি এক প্রেমময় সিদ্ধপুরুষ 

শত্রুর মুখে চুমু খেয়ে 

সান্ধ্যভ্রমণে বেরিয়েছি


১৭.০৬.২৪ 


১১.১


অমলিন তোকে 

পুষি বুকের ভেতরে 

বুকের বাইরেও তুই 

তুইই আমার যন্তর-মন্তর 


২০.০৬.২৪


ঋ ১২


আমাকে জাপটে নিয়ে বললি— 

‘তোমাকে পাব বলে মেঘের সাধনা করেছি 

তোমাকে পাব বলে জলের সাধনা করেছি’


আজ সারাদিন তোকে জলরঙে এঁকেছি 

আজ সারাদিন অসহ্য আষাঢ়কে 

বুক পকেটে পুরে নিয়ে 

জবুথবু হয়েছি 

আর, হে শ্রাবন্তিকা 

তোকে ভালোবাসার জড়িবুটি শিখিয়েছি 

পড়িয়েছি 'সহজ আদরশিক্ষা'


আজ সারাদিন তোর শরীরে 

এঁকেছি মহাকালের নান্দীপাঠ 

সেই দেহচিত্র স্বর্গীয় করে তুলেছে তোকে

আজ সারাদিন তোকে 

কবিতার মতো পাঠ করেছি নাগাড়ে 


আজ আবার নোতুনকরে 

প্রেমিকের শিরস্ত্রাণ পরেছি আমি 

তোকে পরিয়েছি মিহিন ডানা 


এভাবেই প্রেমের নোতুন উড়াল শুরু হল—


১৮.০৬.২৪


১২.১

নোনা জলে ধুয়েছি তোকে 

পাথরের বুকে এঁকেছি তোর শরীর 

তোর শরীরে মেখেছি স্বর্ণরেণু 

তোকে নিয়ে এই অনন্ত পারাপার 


২০.০৬.২৪



নবীনতর পূর্বতন

মোট পৃষ্ঠাদর্শন